তিন পর্যায়ে শিক্ষার ভার এবং বাংলাদেশের মানসম্মত শিক্ষার ভবিষ্যত...


         প্রথমেই আসা যাক বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক মহোদয়ের দিকে। আমরা যদি বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখি তবে দেখব যে, এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা তিন পর্যায়ে বিভক্ত। সরকারী, বেসরকারী এবং প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে তথা বানিজ্যিক পর্যায়ে। সরকারী যে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সে গুলো সবই প্রায় শহর ভিত্তিক। বাংলাদেশের গ্রাম পর্যায়ে আলবৎ দুই একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে কি না আমার জানা নাই। এই সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ একটি নির্দিষ্ট এবং প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই বাছাই এর নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তারা দেশ সেরা মেধাবী এবং প্রশিক্ষিত তাতে সন্দেহ নাই। তবে পরিতাপের বিষয় গ্রামের শিক্ষার্থীগণ তাদের সেবা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত।। আবার গুনগত শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত নানা পদক্ষেপেও তাদের অনেকেরই খুব একটা স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ লক্ষনীয় নয়।

এবার আসা যাক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষক তথা শিক্ষাব্যবস্থার দিকে। দেশের প্রায় ৯৭% শিক্ষার ভার এই পর্যায়ের হাতে ন্যাস্ত। অথচ এই পর্যায়ের শিক্ষকগণ ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। ইনারা না পাবার হতাশা বা ক্ষোভ বা বঞ্চনার যন্ত্রনায় কাতর। তারপরেও এই পর্যায়ের শিক্ষকগণ অনেকেই গুনগত শিক্ষা বিস্তারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এনারা প্রশিক্ষিত এবং দক্ষও বটে।। বর্তমান এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে যে শিক্ষকগণ নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন তারা মেধাবী ও গুনগত শিক্ষক সন্দেহ নাই তদুপরী শিক্ষন-শিখন কর্মকান্ডের উপর বাংলাদেশ সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাঁরা দক্ষ হয়ে উঠেছেন এবং উঠছেন আর তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বপুর্ণ মনোভাবও লক্ষ্য করার মত। যাই হোক তাদের আন্তরিক প্রচেষ্ঠাতেই অর্থাৎ বেসরকারী শিক্ষকগণই এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল ও টিকিয়ে রেখেছে সন্দেহ নাই।

সর্বশেষে আসা যাক প্রাইভেট বা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে। অবশ্য আমি এটাকে ব্যক্তি মালিকানাধীন শিক্ষা ব্যবস্থা বলে থাকি।। এখানে যারা শিক্ষকতা করেন তারা একটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশায় বর্তমান পেটসর্বস্ব সম্মানীতে শিক্ষকতা করেন।। এখানে যারা শিক্ষকতা করান (প্রতিষ্ঠানের মালিক) তারা অধিক মুনাফার আশায় স্বল্প বেতনে শিক্ষকদের খাটিয়ে নেন। বেকারের এই দেশ, এই দেশের অধিকাংশ, শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত তরুন সম্প্রদায়ের অধিকাংশই বেকার।। ঠিক এই সুযোগটিকেই ফিশিং এর টার্গেট হিসেবে নিয়েছেন এই দেশের কিছু অসাধু শিক্ষা ব্যবসায়ীগণ। আরে ভাই ব্যবসা করার জিনিস পাইলেননা ব্যবসা শুরু করলেন শিক্ষা নিয়ে। এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা চাকুরি করেন তথা শিক্ষকতা করেন তাদের অধিকাংশই শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত বেকার, বেটার জব খোঁজা শিক্ষিত মেধাবী তরুন(যারা এই সব প্রতিষ্ঠানে কখনোই স্থায়ী হয় না) অথবা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র।। এনাদের না আছে কোন প্রশিক্ষন না আছে কোন অভিজ্ঞতা। এনাদের বেশির ভাগেরই বিএড প্রশিক্ষন নাই যদিও B.Ed is called the Bible of teaching profession. এনাদের অনেকেরই টিচিং টেকনিক ও মেথোডোলজির জ্ঞান নাই বললেই চলে। এনাদের কারিকুলাম জ্ঞান অনেকটাই সীমিত। এনারা অনেকেই শিক্ষন-শিখন কর্মকান্ড সম্পর্কে অনভিজ্ঞ। adolescent শিক্ষার্থিদের সাথে কিরুপ আচরন করতে হবে বা adolescent নীড কি সেই বিষয়ে তাদের কোন অথরাইজ্‌ড জ্ঞান আছে বলে কমই মনে হয়।। ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট, স্টুডেন্ট লিডারশীপ, শিশু মনোবিজ্ঞান এবং পেডাগজিক্যাল জ্ঞানের দিক থেকে এনারা খুবই দুর্বল।। যাইহোক শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ইনারাও শিক্ষা বিস্তারে অবদান রেখে যাচ্ছেন।।

পরিশেষে আসা যাক এসডিজি-৪ তথা মানসম্মত শিক্ষার দিকে।। জাতির বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, এই ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিভাজন রেখে কি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত সম্ভব? উত্তর হয়তোবা না--ই হবে। যদি তাই হয় তবে আসুন এখনো সময় আছে, মানসম্মত শিক্ষাবিস্তার করে এসডিজি-৪ বাস্তবায়নকল্পে শিক্ষাকে একপ্লাটফর্মে নিয়ে আসি এবং শিক্ষার বানিজ্যিকি করণের লাগাম টেনে ধরি।।

লেখক, ময়দুল ইসলাম, শিক্ষক ও শিক্ষক প্রশিক্ষক।। 

Post a Comment

0 Comments